খাদ্যের গুনাগুণ

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও প্রকারভেদ | Khaas Food

খেজুরের উপকারিতা

মরুভূমির তপ্ত সোনালি রোদে পাকা, মিষ্টি রসে ভরা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার মরুভূমি থেকে আপনার প্লেট পর্যন্ত পাড়ি দেওয়া এক জীবন ইতিহায যেনো এই খেজুর (Dates)। রাসূল (সাঃ) এর প্রিয় খাবার, রমাদানে ইফতারের অপরিহার্য অংশ আর প্রাকৃতিক শক্তি ও পুষ্টির আধার এই খেজুর শুধু স্বাদেই নয় গুণেও বিশ্বজয়ী।

মধ্যপ্রাচ্যের এই ফলটি আরব বনিকদের হাত ধরেই ক্রমশ ছড়িয়ে পরে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও। আজ জানবো সেই খেজুরেরই আদ্যোপান্ত। 

খেজুরের পুষ্টিগুণঃ

USDA এর তথ্য অনুযায়ী ১০০ গ্রাম খেজুর থেকে গড়ে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় – 

  • ক্যালোরিঃ ২৭৭ কিলোক্যালোরি 
  • কার্বোহাইড্রেটঃ ৭৪.৯৭ গ্রাম 
  • ডায়েটারি ফাইবারঃ ৬.৭ গ্রাম 
  • পটাসিয়ামঃ ৬৯৬ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়ামঃ ৫৪ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন বি৬ঃ ০.২৪৯ মিলিগ্রাম 

জনপ্রিয় কিছু খেজুরের নামের তালিকা:

খেজুরের প্রায় ২০০ এর মতন জাত রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত কিছু জাত হচ্ছে – 

১। আজওয়া খেজুর (Dates): সৌদি আরবের এক অতি পরিচিত খেজুর। আরবের প্রাচীণতম প্রসিদ্ধ খেজুরগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। সৌদির বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে মদীনায় এই খেজুর বেশি পাওয়া যায়। 

২। মেদজুল খেজুর: এই খেজুরের মূল উৎপত্তিস্থল জর্ডান হলেও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেই এর চাষ করা হয়। বড় আকার, নরম টেক্সচার ও প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদের জন্য একে খেজুরের রাজা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। 

৩। মারইয়াম খেজুর: সৌদির প্রসিদ্ধ খেজুরগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মারইয়াম খেজুর। 

৪। সুক্কারি খেজুর: ক্রিমি টেক্সচার আর মধুর মতন মিষ্টতার জন্য এই খেজুর সমাদৃত। আরবিতে সুক্কারি অর্থ মিষ্টি। চিনির চেয়েও মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় আরবরা এই খেজুরের নাম দিয়েছে সুক্কারি।  

৫। জাহিদি খেজুর: এই খেজুর মূলত ইরাকে চাষ করা হতো। তবে সময়ের পরিবর্তনে হালকা বাদামী এই খেজুর বর্তমানে বেশ পরিচিত। 

খেজুরের উপকারিতা ও গুণাগুণ:

শুধু কি ইফতারে উপস্থিতি বা মহানবী (সা:) এর প্রিয় ছিলো বলেই খেজুর নিয়ে এতো চর্চা? আদতে খেজুরের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ। এছাড়াও হজমতন্ত্রে ও হৃদসুরক্ষায়ও এর কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য। চলুন আজ খেজুরের এইসব চমৎকার গুণাবলি নিয়ে জেনে নেওয়া যাক। 

  • কোষের ক্ষতি প্রতিহত করে: খেজুর পলিফেনল সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের মুক্ত মূলক প্রতিহত করে একই সাথে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে কোষের ক্ষতি হওয়ার প্রবণতা কমায়। 
  • কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক: খেজুরে আছে প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ জাতীয় উপাদান এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার যা পরিপাকপতন্ত্রের কার্যক্রম সহজ করে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের বিপরীতে কাজ করে। 
  • পুষ্টি শোষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে: খেজুরে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার এর পাশাপাশি অত্যাবশকীয় অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান যা খাবারের হজম প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করার মাধ্যমে পুষ্টি শোষণ বৃদ্ধি করে এবং তা দেহে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়। 
  • হাড়ের ব্যথা উপশম: খেজুরে আছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু খনিজ উপাদান যা অস্টিওআর্থ্রাইটিস জনিত ব্যথা উপশমে ভূমিকা রাখে। একই সাথে এতে বিদ্যমান খনিজ উপাদানগুলো বাড়ন্ত বয়সে হাড়ের গঠনের জন্য কাজ করে। 
  • রক্তশূণ্যতার বিপরীতে কাজ করে: খেজুরে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের পাশাপাশি আয়রণ বিদ্যমান থাকায় এটি রক্তশূণ্যতার রোগীদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। একই সাথে মাথা ঘোরানো বা দূর্বল লাগা থেকেও মুক্তি দেয় এই ফলটি। 
  • স্ট্রোক প্রতিরোধে কাজ করে: খেজুরে বেশ ভালো মাত্রায় পটাশিয়াম উপস্থিত যা স্ট্রোক এবং হৃদপিন্ডের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমায়। একই সাথে খেজুর খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে হৃদসুরক্ষা প্রদাণ করে। 
  • মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: খেজুরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বিদ্যমান যা নার্ভাস সিস্টেম এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। 
  • অ্যালার্জি কমাতে: খেজুরে আছে অর্গানিক সালফার যা অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে ভূমিকা রাখে। ২০০২ সালের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে সিজনাল অ্যালার্জি প্রতিরোধে খেজুর এক অনন্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। 
  • গর্ভাবস্থায় খেজুর: প্রসবকালীন সময়ে খেজুর নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে গর্ভাবস্থায় খেজুর গ্রহণকারী মহিলাদের প্রসবকালীন সময়ে জরায়ু দ্রুত প্রসারিত হয় এবং প্রসবকালীন সময় যারা খেজুর খান নি তাদের তুলনায় কম লাগে। 
  • বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যায় ভূমিকা রাখে: খেজুর নিয়ে করা বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে বন্ধ্যাত্বতে ভূমিকা রাখে এমন কিছু হরমোনজনিত সমস্যা এবং শারীরিক সমস্যায় খেজুর কিছুটা উপকারী ভূমিকা রাখে। 

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় ও নিয়ম:

সাধারণত দিনে ২-৪টা খেজুর গ্রহণ করা উত্তম। যেহেতু খেজুর উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ একটি খাবার তাই অতিরিক্ত গ্রহণে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক গ্লাসে দুধে ২-৩টি খেজুর বীজ ফেলে দিয়ে পুরো রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে গ্রহণ করা যায়। এটি পুরো দিনের জন্য চমৎকার শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এছাড়া স্মুথি, কাস্টার্ড বা অন্য যেকোন খাবারে খেজুর (Dates) যুক্ত করে গ্রহণ করা যায়। 

খেজুর গ্রহণে সতর্কতাঃ 

যেহেতু এটি উচ্চ ক্যালরি যুক্ত ফল তাই অতিরিক্ত গ্রহণে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাছাড়া এতে বেশ ভালো মাত্রায় পটাশিয়াম থাকায় কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক। 

খেজুর এর উপকারিতা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, “যে ব্যাক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না” (বুখারী ও মুসলিম)। খেজুরের অসীম উপকারিতা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই প্রতিদিন খেজুর গ্রহণের অভ্যাস করা উত্তম।

Leave a Reply