রোগ-প্রতিরোধ

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে

ক্যান্সার প্রতিরোধ

ক্যান্সারের নাম শুনলে সবাই ভয় পেয়ে যায়। কারণ, পৃথিবীর বড় বড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, বৈজ্ঞানিকরা এখনো পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসা খোঁজার জন্যে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে বিজ্ঞানের অবিরাম অগ্রগতির ফলে এটি বুঝা সম্ভব হয়েছে যে, খাবারের  মধ্যেই আসলে নিহিত আছে ক্যান্সারের সমাধান। কিন্তু খাবার ক্যান্সার প্রতিরোধ করবে কীভাবে? আসুন জেনে নিই।

ক্যান্সার কী?

ক্যান্সার কী? এভাবে বলা যায়, ক্যান্সার বা কর্কট রোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলে যেসব রোগ সৃষ্টি করে তাদের সমষ্টি। প্রাণীর কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মিত বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। এই কোষগুলো যখন কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একে টিউমার বলে। এই টিউমার মারাত্মক হতে পারে যা ক্যান্সার নামে পরিচিত।

ক্যান্সার ঠিক কী কারণে হয় সেটা এখনও কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি। তবে এর সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বয়স একটা কারণ। বয়স বাড়লে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ক্যান্সারের সাথে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। রঙের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন – গবেষণায় বের হয়ে এসেছে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

কীভাবে বুঝা যাবে যে, একজনের ক্যান্সার হয়েছে? নিদিষ্ট করে বলা যাবে না তবে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। লক্ষণগুলো  হচ্ছে:

  • খুব ক্লান্ত মনে হওয়া
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া
  • শরীরের যে কোনজায়গায় চাকা বা দলা সৃষ্টি হওয়া
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি হওয়া বা গলা ভাঙ্গা
  • মল এর মধ্যে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া)
  • জ্বর, রাতে ঠান্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
  • ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া

গবেষণায বলে যে, নিয়মিত কিছু ব্যাপার মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়, যেমন-ব্যায়াম। প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা যেমন-দৌড়ানো, সাইকেল চালনো, হাঁটা ইত্যাদি। এমন কোন নিদিষ্ট খাবার নেই যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে । তবে ধারণা করা হয় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ – যে খাবারগুলো বেশি বেশি খাবেন

খাবারের তালিকায় যে খাবার গুলো রাখবেন তা হল-

গ্রিন টি

সাইটোক্যামিকেলস নামের এক ধরণের পদার্থ এর উপস্থিত থাকার কারণে নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে স্তন ক্যান্সারের ঝুকি কমে। ভালো মানের গ্রিন টি অর্ডার করুণ খাসফুড অনলাইন শপ থেকেঃ Khaasfood Tea

মাছ

মাছ সব চাইতে ভালো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ। এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ দেহে ক্যান্সারের সেল গঠন প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।

রসুন 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় রসুনের অন্যতম প্রধান উপকারিতা হচ্ছে এটি শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে কলোন, স্টোমাক, ইন্টেস্টিনাল, এবং প্রস্টেট ক্যান্সার। রসুন এমন একটি উপকারী  ও শক্তিশালী খাদ্য যার আন্টি-বাক্টোরিয়াল ধর্ম  শরীরে ক্যান্সার কোষের  ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

আদা  

আদার অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন –  জ্বর, ঠাণ্ডা,  হার্টের সমস্যা,  কোলেস্টেরল কমানো, আর্থ্রাইটিস সহ ক্যান্সার-এর মত জটিল অসুখ নিরসনে আদা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।  ক্যান্সার নিরাময়ের প্রতিষেধক হিসাবে প্রচলিত কেমোথেরাপি থেকে আদা ১০,০০০ গুন বেশি শক্তিশালী মেডিসিন যা শরীরের নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষ গুলো ধংস করতে সাহায্য করে।

হলুদ

মশলার মধ্যে হলুদই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে আপনার শরীরকে সহায়তা করে। এতে রয়েছে শক্তিশালী কারকিউমিন পলিফেনল নামক পদার্থ। গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত, কারকিউমিন ক্যান্সার সেলের গ্রোথকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কারকিউমিন শরীরে অ্যাপপটোসিস তৈরি করে যা শরীরে ক্যান্সারের জন্ম দেওয়া ক্ষতিকারক সেল মেরে ফেলতে সাহায্য করে। মেলানোমা, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ব্রেন টিউমার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার এবং লিউকেমিয়ার মতো ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে হলুদ।

মৌরি

খাওয়ার রুচি বাড়ানোর জন্য প্রত্যেক গৃহস্থ বাড়িতেই মজুত থাকে মৌরি। মৌরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই উপকারী। মৌরিতে রয়েছে অ্যানেটহোল যা ক্যান্সার সেলের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

জিরা

এই মশলাটিও ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জিরায় রয়েছে থাইমোকুইনান নামক এক যৌগ যা প্রস্টেট ক্যান্সারের জন্যে দায়ী সেলের শরীরে ছড়িয়ে পড়া আটকিয়ে থাকে।

কাচাঁমরিচ

যে কোন কাচাঁ মরিচে রয়েছে সাইটোক্যামিকেলস এবং অন্যান্য পুষ্টি, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। মরিচে রয়েছে ক্যাপসাইসিন যা ক্যান্সারের কোষ ধবংস করে।

এছাড়া অর্গানিক নয় এমন খাবার খাওয়া থেকে সতর্ক হওয়া আবশ্যক। ভেজালমুক্ত খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ভেজালযুক্ত খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ভেবেচিন্তে খাবার খেতে হবে যাতে করে নিরাপদ ও সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। মনে রাখবেন ক্যান্সার প্রতিরোধ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস দারুণ ভূমিকা রাখে।

 আরও পড়ুন

Leave a Reply