রোগ-প্রতিরোধ, শীতের আয়োজন

জয়তুনের তেল বা অলিভ অয়েল – সৌন্দর্য ও সুস্থতার যোগসূত্র 

Khaas Extra Virgin Olive Oil

“তোমরা জয়তুনের তেল খাও এবং শরীরে মাখ। কেননা, তা বরকতময় গাছ থেকে নি:সৃত।” – তিরমিযী। অলিভ অয়েল একটি উপকারী পণ্য। জয়তুন ফল থেকে এই তেল হয়।  জয়তুন এমন এক ফল যার কসম দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা। সূরা আত-ত্বীন এর প্রথম লাইনে এই ফলের কসম করে আয়াত নাজিল করেছেন মহান আল্লাহ তা’আলা আর এর গাছকে আখ্যায়িত করেছেন মুবারাক গাছ হিসেবে। সূরা মুমিনুন এর বিশ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘আর এক বৃক্ষ যা সিনাই পাহাড় হতে উদ্গত হয়, যা আহারকারীদের জন্য তেল ও তরকারি উৎপন্ন করে।’ শুধু কুরআনেই নয় বরং এই ফল ও গাছের উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাবেও। তাইতো ইহুদীরা এই গাছের পাতাকে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। জয়তুনের তেল বা অলিভ অয়েল ত্বক ও দাঁড়ির যত্নে যেমন কার্যকরী তেমনি শারীরিক সুস্থতায়ও এর ভূমিকা রয়েছে। 

 

জয়তুনের তেলের উপকারিতাঃ

জয়তুনের তেল ত্বক, চুল, দাঁড়ি,মাড়ি ও সর্বপরি দেহের আভ্যন্তরীন সুস্থতার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস ও আয়োডিন সার্বিক ভাবে সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। পবিত্র কোরআনে মোট ৭ জায়গায় জয়তুনের উল্লেখ আছে। এতো ফজিলতপূর্ণ এই ফলের উপকারিতা এবার জেনে নেওয়া যাক – 

দাঁড়ির যত্নে জয়তুনের তেল 

ইসলামে দাঁড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর রাসুল (সা.) দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন বিধায় দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) মোঁচ কাটার ও দাড়ি লম্বা করার আদেশ করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১/১২৯)। আর ইসলাম সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা কে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদিসে আছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।” (মুসলিম ১/৬৫)। এই হাদিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইবনুল কাইয়েম রহঃ বলেছেন, ব্যপকার্থে সব কিছুই অর্থাৎ, জামা কাপড়, জুতা – স্যান্ডেল থেকে শুরু করে চুল – দাঁড়ি সব কিছুই এই সৌন্দর্যের অধীনস্ত। দাঁড়ির যত্নে জয়তুনের তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে বহু আগে থেকে। চুল ও দাঁড়িতে জয়তুন তেল এর ব্যবহার চুল ও দাঁড়ি সাদা হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। গোসলের পূর্বে দাঁড়িতে এর ব্যবহারের ফলে দাঁড়ির নিচের ত্বক ভালো থাকে। নবী করিম (সাঃ) দাঁড়ির যত্নে এই তেল ব্যবহার করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরও ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করতেন। 

ত্বকের যত্নে জয়তুন তেল 

জয়তুন তেলে রয়েছে ভিটামিন ই যা ত্বকের যত্নে উপকারি। এই ভিটামিন ই ত্বককে ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়লেট রশ্মি হতে সুরক্ষা দেয়। ক্ষতিকর এই রশ্মি ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম। এছাড়া অতিরিক্ত কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করেও ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষম এই জয়তুনের তেল। আবার এই তেল অ্যালার্জি প্রতিহত করতেও সহায়ক। পাশাপাশি এতে বিদ্যমান ভিটামিন ই ত্বকের লাবন্য ধরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় তলপেটে সৃষ্ট সাদা দাগ যা স্ট্রেচ মার্ক হিসেবে পরিচিত তা দূর করতেও অনেকে এই তেল মালিশ করে থাকে। 

হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় 

জয়তুনের তেলে রয়েছে অলেইক অ্যাসিড যা হৃদসুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। এছাড়া এই তেল রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (LDL) কমিয়ে হৃদপিন্ডকে ভালো রাখে। রক্তচাপ কমাতেও এর ভূমিকা লক্ষ্যনীয়। এতে বিদ্যমান মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডও হৃদপিন্ডের জন্য উপকারি। এই তেলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে রক্তনালী ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। 

অন্যান্য রোগ নিরাময়ে 

আলঝেইমার বা স্মৃতি বিভ্রম, রক্ত শূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিহত করতে এই তেল বিশেষ উপকারী। তাছাড়া শরীরের ব্যথা নিরাময়ে এই তেল দিয়ে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। এমনকি দাঁতের যত্নেও এর ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধিতে এবং প্রজনন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে এই তেল বিশেষ কার্যকরী। 

যেভাবে গ্রহণ করা যাবে জয়তুন তেলঃ

রান্নায় এই তেল ব্যবহার করা যায়। রান্নার পাশাপাশি সালাদের ড্রেসিং হিসেবেও এর ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। অনেকে আবার খালি তেলও গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া মালিশের কাজে জয়তুন তেলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

বহুগুণ সম্পন্ন জয়তুনের তেল বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের নিকট বিশেষ গুরুত্ববহ। তবে এর থেকে সঠিক উপকার পেতে চাই ভালো মানের তেল। তাছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে এর অনেক গুণাগুণ। তাই এই তেল সংগ্রহের পূর্বে অবশ্যই এর গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া আবশ্যক। 

 

Leave a Reply