খাদ্যের গুনাগুণ

ব্রয়লার মুরগি – জেনে শুনে বিষ খাচ্ছেন না তো?

Khaas Food Safe Broiler

“ব্রয়লার মুরগি তেও দেখা মিলেছে ভারী ধাতু, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ও বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানের” – এমন খবর পড়ে কেমন যেনো এর অশান্তিতে ছেয়ে গেলো আফজাল সাহেবের মন। পাশের ঘরেই ঘুমোচ্ছে তার আদরের কন্যা। আর কন্যার যে আবার মুরগির মাংস ছাড়া চলেই না। কিন্তু এমন সব খবর সামনে এলে ব্রয়লার কিনতেও যেনো মন সাঁড়া দেয় না। এ যেনো এক শাঁখের করাত! এর পাশাপাশি আরেকটা ভাবনা দানা বেঁধে উঠলো আফজাল সাহেবের মাথায়। আজকাল আমাদের চারপাশে ওবেজ বেবি বা অতিরিক্ত ওজনের শিশু বেশি দেখা যাচ্ছে। এমনকি তার কন্যাও বয়সের তুলনায় ওজনাধিক্যে ভূগছে। এর পিছনেও এই ব্রয়লার দায়ী নয় তো? 

 

ব্রয়লার মুরগি কেনো আজ ঝুঁকিপূর্ন? 

মুরগি আমাদের প্রোটিনের অন্যতম উৎস। একসময় যে মুরগি নির্বিঘ্নে গ্রহণ করা যেতো তা আজ হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম কারণ। এর পিছনে কারণ সমূহ কি চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

 

১। অস্বাস্থ্যকর ফিডঃ মুরগির মাংসের গুণাগুণ অনেকাংশেই এর ফিডের উপর নির্ভর করে। বর্তমানে অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা ফিডে ব্যবহার করছে ট্যানারির বর্জ্য, মিট এন্ড বোন মিল (MBM) এর মতন উপাদান। যার ফলে ব্রয়লার মুরগির দেহে জমা হচ্ছে লেড, ক্রোমিয়ামের মতন ভারী ধাতু যার অতিরিক্ত মাত্রা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর। 

 

২। রোগমুক্ত রাখতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারঃ মুরগিকে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে দূরে রাখতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক। যেহেতু ব্রয়লার মুরগি পর্যাপ্ত আলো বাতাস তথা প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ করতে পারে না তাই শুধু রোগাক্রান্ত মুরগিকে সুস্থ করতেই নয়, এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার করা হয় মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও। আর এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই কাল হয়ে উঠে মানুষের জন্য। কেননা এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো মাংসের মাধ্যমে মানবদেহেও অনুপ্রবেশ ঘটায় এবং মানবদেহের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়তে শুরু করে। 

 

৩। গ্রোথ হরমনের ব্যবহারঃ অতিরিক্ত লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগিতে গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করে। যার ফলশ্রুতিতে মুরগির ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যপার হচ্ছে এর প্রভাব পরে ব্রয়লার গ্রহণকারী মানুষের উপরেও। 

 

মানবদেহে ব্রয়লারের প্রভাবঃ 

অনেকের মনেই এই ধারনা আসতে পারে যে ব্রয়লারের ফিড বা এতে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন ইত্যাদি তো ব্রয়লারের উপর প্রয়োগ করা হয়, এ থেকে মানবদেহে কীভাবে সমস্যা তৈরি হবে। 

আদতে মুরগির বিভিন্ন অঙ্গে এইসব উপাদান জমা থাকে যা মুরগির মাধ্যমে মানুষের দেহে অনুপ্রবেশ ঘটায়। এমনকি এই উপাদানগুলো রান্নার পরও নষ্ট হয় না। আর এর ফলেই মানবদেহে দেখা যায় নানান ধরণের শারীরিক সমস্যা। 

 

১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসঃ ব্রয়লার মুরগিতে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক যখন অতিমাত্রায় মানবদেহে অনুপ্রবেশ ঘটাতে থাকে তখন তা ধীরে ধীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর দিকে ধাবিত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে কোন অনুজীবের সংক্রমন রোধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার পরও সেই অনুজীবের টিকে থাকার সক্ষমতা। সাধারণত কোন অনুজীব ধ্বংস করার জন্য প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রায় তারতম্য দেখা দিলে সেই অনুজীব আস্তে আস্তে ঐ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়। মুরগির দেহে প্রবেশকৃত অ্যান্টিবায়োটিক মাংসের মাধ্যমের মানবদেহে অনুপ্রবেশ ঘটায় এবং মানবদেহকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট করে তোলে। এর ফলশ্রুতিতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে। 

 

Leave a Reply