রেসিপি

চালের গুঁড়ায় শীতকালীন নানা রকম পিঠা

Pitha

ধান কাটা উৎসবের মাধ্যমে কৃষকের ঘরে ঘরে ওঠে নতুন ধান। সেই ধান ঢেকিতে ভেঙ্গে অথবা হাস্কিং মেশিনে ডি হাস্কিং করে রান্না হয় নতুন চালের ভাত। এছাড়া এই নতুন চাল দিয়ে তৈরি হয় নানা রকম পিঠা (Pitha)। মৌ মৌ গন্ধে মোহিত হয় চারপাশ। নতুন ধান, নতুন চালের আগমনে গ্রামীণ জীবনে শুরু হয় নবান্ন উৎসব!

আর সবধরনের পিঠা তৈরির মূল উপকরণ কিন্তু চালের গুঁড়া। নতুন ধানের চালকে ঢেঁকিতে গুঁড়া করে তৈরি করা হয় বিভিন্ন রকমের চালের গুঁড়ার পিঠা (Pitha)। শীতকালে আবার খেঁজুর গাছের রস জ্বাল দিয়ে বানানো হয় সুস্বাদু খেজুরের গুড়। বাড়িতেই বানিয়ে ফেলে গাঁয়ের বৌ ঝিয়েরাই। তাই দিয়ে পুরো শীতকাল জুড়েই চলতে থাকে বাড়িতে বাড়িতে পিঠা-পুলি তৈরির ধুম।

ঢাকা শহরের ফুটপাতে ফুটপাতে, ফাস্টফুড শপে এবং নানা রকম পিঠার দোকানেও সবচাইতে বেশি যে পিঠাটা দেখা যায় তা হচ্ছে ভাপাপিঠা। ছেলেবুড়ো হতে শুরু করে তরুণ-তরুণী এমনকি অনেক অনেক টিন এইজ ছেলেমেয়েদের পছন্দের তালিকাতেও রয়েছে এই বহুল পরিচিত ভাপা পিঠা।

তবে শীতের পিঠা বলতে শুধু ভাপা পিঠাই বুঝায় না। শীতের পিঠায় রয়েছে আরও আরও রকমারি পিঠা। সবগুলোর নাম নিশ্চয়ই কেউই বলে শেষ করতে পারবে না। তবুও যতগুলো জানি বা মনে পড়ে সেসব পিঠার নাম ও পিঠা বানাবার কৌশলগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি। পুরো শীতকাল জুড়ে যখনই পিঠা খেতে মন চাইবে, বানিয়ে ফেলুন যে কোনো পিঠা।

ভাপা পিঠা (Vaba Pitha)

সেদ্ধ ও আতপ চালের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, গুড় ১ কাপ নারকেল কুরানো বড় ১ কাপ, লবণ আধা চা চামচ, পানি সামান্য। পিঠার জন্য ছোট ২টি বাটি, ২ টুকরো পাতলা কাপড়।
চাল গুড়া একটু পানি দিয়ে ঝুরজুরা করে মাখিয়ে নিয়ে বাঁশের চালুনিতে করে চেলে নিতে হবে।
এবার বাটিতে অল্প চালের গুঁড়া দিয়ে তার মাঝখানে গর্ত করে গুড় ও নারকেল দিয়ে ওপরে চালের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এবার পাতলা কাপড় ভিজিয়ে পিঠা ঢেকে দিয়ে বাটির নিচ পর্যন্ত কাপড় ধরে বাটিটি উল্টে দিয়ে ফুটন্ত পানির ওপর ছিদ্র করা ঢাকনার ওপর বসিয়ে বাটিটি উঠিয়ে পিঠার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পাঁচ-ছয় মিনিট পর পিঠা উঠিয়ে পরিবেশন করুন।

শাহী ভাপা পিঠা (Shahi Vaba Pitha)

সেদ্ধ চালের গুঁড়া ২ কাপ, পোলাওর চালের গুঁড়া ২ কাপ, খেজুরের গুড় দেড় কাপ, নারকেল কোরানো ২ কাপ, দুধের ক্ষীর ১ কাপ, মালাই ১ কাপ, কিশমিশ ২ টেবিল চামচ।
পিঠার হাঁড়িতে বাষ্প করতে হবে। চালের গুঁড়ায় স্বাদমতো লবণ ও পরিমাণমতো কুসুম গরম পানি এমনভাবে মেশাতে হবে যেন চালের গুঁড়া দলা না বাঁধে। চালের গুঁড়া বাঁশের চালুনিতে চেলে নিতে হবে। গুঁড়ায় অর্ধেক নারকেল কোরানো মেশাতে হবে।
একটি বাটিতে অল্প কিছু চালের গুঁড়া, কিছু নারকেল মাখানো চালের গুঁড়া, কিছু গুড় দিয়ে এর ওপর আবার নারকেল মাখানো চালের গুঁড়া দিয়ে দুধের ক্ষীর, পেস্তাবাদাম, কিশমিশ দিয়ে আবার কিছু চালের গুঁড়া মিশিয়ে এটি পাতলা ভেজা কাপড় দিয়ে ধরে গরম পিঠার হাঁড়ির মুখে রেখে বাটি উল্টে দিতে হবে। এরপর তা ঢেকে দিয়ে ১০-১২ মিনিট পর কাপড়সহ পিঠা তুলে কাপড় থেকে ছাড়িয়ে রাখতে হবে। পিঠার ওপর মালাই পেস্তাবাদাম কুচি দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে।

দুধ চিতুই (Milk Chitoi)

চালের গুঁড়া ৪ কাপ, দুধ ১ লিটার, গুড় ২ কাপ, কোরানো নারকেল আধা কাপ।
প্রথমে দুধ জাল দিয়ে ঘন করে, আলাদা গুড়ের সিরা তৈরি করে রাখতে হবে। এবার হালকা গরম পানিতে গুঁড়া গুলে পাতলা গোলা তৈরি করে মাটির খোলায় কাপে করে গোলা দিয়ে পিঠা তৈরি করতে হবে এবং গুড়ের রসে ভেজাতে হবে। পিঠা ঠাণ্ডা হলে তার ওপর ঠাণ্ডা দুধ ঢেলে দিয়ে নারকেল ছড়িয়ে দিতে হবে।

রস চিতুই বা রসের পিঠা (Roser Pitha)

চালের গুঁড়া ৪ কাপ, দুধ ১ লিটার, গুড় ২ কাপ, কোরানো নারকেল আধা কাপ।
প্রথমে দুধ জাল দিয়ে ঘন করে আলাদা করে গুড়ের সিরা তৈরি করে রাখতে হবে। এবার হালকা গরম পানিতে গুঁড়া গুলে পাতলা গোলা তৈরি করতে হবে। এবার মাটির খোলায় গোলা ঢেলে পিঠা তৈরি করতে হবে। পিঠা ঠাণ্ডা হলে জ্বাল দেওয়া রসে ভিজিয়ে রাখতে হবে সারারাত!

সিদ্ধ পুলি পিঠা (Siddo Puli Pitha)

আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, খেজুরের গুড় পরিমাণমতো, কোরানো নারকেল ১ কাপ।
আতপ চালের গুঁড়া হালকা ভেজে পরিমাণমতো পানি দিয়ে কাই করে নতে হবে। কড়াইতে গুড় ও নারকেল একসঙ্গে চুলায় দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। মিশ্রণটি শুকিয়ে আঠা আঠা হলে নামাতে হবে। খামির হাতে নিয়ে গোল গোল করে বেলে মাঝখানে পুর দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকার দিয়ে মুখটি বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে সব পুলি পিঠা বানিয়ে ভাপে সিদ্ধ করতে হবে।

তিলের পুলি

চালের গুঁড়া ২ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, নারকেল কোরানো ২ কাপ, সাদা তিল আধাকাপ, গুড় দেড় কাপ, পানি সোয়া এক কাপ।
লবণ, পানি ও ঘি একসঙ্গে চুলায় দিতে হবে। ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে কাই বানাতে হবে। তিল শুকনা খোলায় টেলে নিতে হবে। গুড় ও নারকেল চুলায় দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। চটচটে হলে তিল দিয়ে নামাতে হবে। খামির ১৬ ভাগ বা ইচ্ছামতো ভাগ করে প্রতি ভাগে বাটির মতো অর্ধচন্দ্রাকার বা ইচ্ছামতো আকার দিয়ে মুখ বন্ধ করে পুলি করতে হবে। ভাপে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
দুধপুলি: চালের গুড়া ২ কাপ, নারকেল ১ ভাগের ৪ কাপ, দুধ ২ কাপ, চিনি ১ কাপ, এলাচ কয়েকটি, পানি ২ কাপ।
পানি ও চালের গুড়া দিয়ে শক্ত ডো তৈরি করে নিতে হবে। এবার ছোট ছোট বা ২ বাই ২ রুটি বেলে ভিতরে নারকেল দিয়ে ছোট পুলি তৈরি করে চুলায় দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে চিনি ও এলাচসহ পুলি দিয়ে তুলে নামিয়ে নিতে হবে।

নারকেলের তিল পুলি

কুরানো নারকেল ২ কাপ ভাজা তিলের গুঁড়া আধা কাপ খেজুরের গুড় ১ কাপ আতপ চালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ এক চিমটি এলাচ গুঁড়া দারচিনি ২-৩টা, আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ পানি দেড় কাপ লবণ স্বাদমতো ভাজার জন্য তেল দুই কাপ কুরানো নারকেলে গুড় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না করতে হবে। একটু শক্ত হয়ে এলে এলাচ, তিল ও চালের গুঁড়া ছড়িয়ে আরও একটু রান্না করতে হবে। তেল উঠে পুর যখন পাকানোর মতো শক্ত হবে, তখন নামিয়ে ঠাণ্ডা করে লম্বাভাবে সব পুর বানিয়ে রাখতে হবে। এবার চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে ভালোভাবে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে হবে, যাতে খামিরে কোনো চাকা না থাকে। একটু ঠান্ডা হলে পানি ছিটিয়ে ভালো করে ছেনে রুটি বানাতে হবে। রুটির এক কিনারে পুর রেখে বাঁকানো চাঁদের মতো উল্টে পিঠে আটকে দিতে হবে। এবার টিনের পাত অথবা পুলিপিঠা কাটার চাকতি দিয়ে কেটে নিতে হবে। কিনারে মুড়ি ভেঙে ও নকশা করা যায়। গরম তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে।

তেলেভাজা পিঠা অথবা পাকন পিঠা

চালের গুঁড়া আধা কেজি, খেজুরের গুড় ৫০০ গ্রাম, আটা এক পোয়া, তেল আধা কেজি। খেজুরের গুড় আর এক গ্লাস পানি জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। তারপর এতে চালের গুঁড়া ও আটা দিয়ে ঘন করে মিশাতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম হলে এক চামচ করে পিঠার গোলা ছেড়ে দিতে হবে। পিঠা ফুলে উঠলেই তৈরী হয়ে গেলো তেলেভাজা বা পাকন পিঠা।
তাই আপনারা চাইলে খাস ফুডের যে কোনো আউটলেট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন চালের গুঁড়া। আপনার বাড়িতে শীতের পিঠা উৎসব হোক খাস ফুডের চালের গুঁড়া দিয়ে এই প্রত্যাশা রইল।

Leave a Reply