খাদ্যের গুনাগুণ

কাঠবাদাম (Almond) এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও সতর্কতা | Khaas Food

কাঠবাদাম এর উপকারিতা

কাঠবাদাম (Almond) – কাঠ রঙের আবরণে ঢাকা অফহোয়াইট রঙের এক বাদাম যা সচারাচর মিষ্টিজাতীয় খাবারের উপর গার্নিশের কাজেই ব্যবহার হতে দেখে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর বাদামগুলোর মধ্যে একটি। কাঠবাদাম (Almond) মূলত নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো একটি বৃহদাকার গাছের বীজ।

এর আদিনিবাস কোথায় সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য না জানা গেলেও কালের বিবর্তণে এটি আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সহ অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত উষ্ণ অঞ্চলে জন্মে থাকে।

কাঠবাদামের (Almond) পুষ্টিগুণ:

USDA এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি ১০০গ্রাম কাঠবাদাম থেকে পাওয়া যায় –

  • ক্যালরি – ৫৮৪ কিলক্যালরি
  • প্রোটিন – ২১.৪ গ্রাম
  • ফ্যাট – ৫১.১ গ্রাম
  • খাদ্য আঁশ – ১০.৮ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম – ২৫৪ মি.গ্রা
  • ম্যাগনেসিয়াম – ২৫৮ মি.গ্রা
  • ফসফরাস – ৫০৩ মি.গ্রা
  • বায়োটিন – ৫৭ মাইক্রোগ্রাম

কাঠবাদাম এর উপকারিতা:

১. হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা:
কাঠবাদাম নিইয়ে করা বিভিন্ন দেশের গবেষণায় উঠে আসে কাঠবাদাম (Almond) গ্রহণের ফলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল তথা LDL এর মাত্রা হ্রাস পায়। ২৬ জন হাইপারকোলেস্টেরোমিক রোগীর উপর করা তেমনই একটি গবষণায় উঠে আসে যে দৈনিক ১০০গ্রাম পরিমাণ কাঠবাদাম তাদের রক্তের টোটাল কোলেস্টেরল ৯% এবং প্লাজমা LDL কোলেস্টেরল ১২% পর্যন্ত হ্রাস করতে সক্ষম। একই গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় লো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ডায়েটের সাথে প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম কাঠবাদাম গ্রহণ টোটাল প্লাজমা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে ।

২। ওজন নিয়ন্ত্রণে:
কাঠবাদাম ফাইবার বা খাদ্য আঁশ, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এর চমৎকার উৎস। এই উপাদানগুলো অনেকটা সময় পেট ভরা রাখতে এবং ক্ষুদাভাব নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

৩। ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী:
কাঠবাদাম একদিকে যেমন খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের ভালো উৎস অন্যদিকে এর গ্লাইসেমিন ইনডেক্স বেশ কম। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় এটি বেশ ভালো একটি উপাদান হিসেবে স্থান পেতে পারে বলেই গবেষকেরা বলে থাকে। এছাড়া কাঠবাদামের ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।

৪। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে:
কাঠবাদামে উপস্থিত রিবোফ্ল্যাভিন এবং পলিফেনল মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। একই সাথে মস্তিষ্কের কোষ সুরক্ষিত রাখতেও ভূমিকা রাখে।

৫। ত্বক ও চুলের যত্নে কাঠবাদাম (Almond):
কাঠবাদামে আছে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের টান টান ভাব ধরে রাখতে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে কার্যকরী। ২৮ জন মেনোপজ পরবর্তী বয়সী নারীদের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কাঠবাদাম গ্রহণের ফলে তাদের ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার হার অন্যদের তুলনায় অনেকাংশে কম ছিলো।

কাঠবাদাম এর অপকারিতা: যখন সতর্ক হওয়া জরুরি

১. অ্যালার্জির ঝুঁকি: কাঠবাদামে অ্যালার্জি বেশ সাধারণই বলা যায়, বিশেষত শিশুদের মধ্যে। এর লক্ষণ হিসেবে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, ফোলাভাব দেখা দেয়।

২. অতিরিক্ত গ্রহণে ওজন বৃদ্ধি: কাঠবাদাম (Almond) উচ্চ ক্যালরি যুক্ত একটি খাবার। তাই অতিরিক্ত গ্রহণে ওজন কমার বদলে বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে যায়।

৩. কিডনির সমস্যা বাড়াতে পারে: কাঠবাদামে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কিডনি রোগীদের কাঠবাদাম গ্রহণের বেলায় সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম:

অনেক গবেষক মনে করেন যে সকালে ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম গ্রহণ করলে তা পরিপাকতন্ত্রের জন্য বেশ ভালো। তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। অবশ্য কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে গ্রহণ করলে এতে বিদ্যমান ফাইটিক অ্যাসিডের পরিমাণ হ্রাস পায় ফলে এর পুষ্টি উপাদানের শোষণ বৃদ্ধি পায়।

তাছাড়া সন্ধ্যায় নাস্তা হিসেবে বা ওয়ার্কআউটের পর শক্তি পুনরুদ্ধারেও কাঠবাদাম হতে পারে এক চমৎকার উৎস। এক্ষেত্রে লবন ছাড়া ভেজে গ্রহণ করা যায়।

গর্ভাবস্থায় কাঠবাদাম: নিরাপদ নাকি ঝুঁকিপূর্ণ?

গর্ভাবস্থায় কাঠবাদামের চমৎকার পুষ্টিগুণের জন্য গর্ভাবস্থায় এটি হতে পারে আদর্শ খাবার। কেননা এতে রয়েছে ফোলেট, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ভালো যা বাচ্চার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য আবশ্যক উপাদান। তবে যদি গর্ভধারনকারী মায়ের অ্যালার্জি থেকে থাকে সেক্ষেত্রে কাঠবাদাম গ্রহণ না করাই উত্তম।

কাঠবাদাম একটি পুষ্টিকর স্ন্যাক্স, তবে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। দিনে ২০-৩০ গ্রাম (প্রায় এক মুঠো) কাঠবাদামের আদর্শ পরিমান। গর্ভাবস্থায়, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বিশেষ করে কিডনি রোগীর মতন জটিল স্বাস্থ্য অবস্থায় পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ না করাই উত্তম।

Leave a Reply