দেখতে সাধারণ, ছোট আকারের সবুজাভ হলুদ মেথি বীজ আপনার রান্নাঘরে হয়তো বছরের পর বছর ধরে শোভা পাচ্ছে। কিন্তু এই মেথি বীজই হতে পারে আপনার সৌন্দর্য ও সুস্থতার এক চমৎকার ফর্মুলা তা জানা আছে কি? প্রাচীনকাল থেকে মেথি (Fenugreek) শুধু একটি মসলাই নয়, বরং একটি অত্যন্ত গুণসম্পন্ন ভেষজ উপাদান হিসেবে সুপরিচিত। রান্নার স্বাদ বাড়ানো থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, অ্যাসিডিটি দূর করা, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি – সব ক্ষেত্রেই মেথির জুড়ি নেই।
কিন্তু এই সুপারফুডটি কীভাবে ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ উপকার পাবেন তা নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে সংশয়। চলুন তবে, আজ জেনে নিই মেথির অজানা সব গুণাগুণ ও ব্যবহারবিধি।
মেথি(Fenugreek) এর পুষ্টিগুণ :
মেথির অসামান্য পুষ্টিগুণ এর জন্য একে সুপারফুড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। USDA এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম মেথিতে রয়েছে –
- খাদ্য আঁশ – ২৪.৬ গ্রাম
- প্রোটিন – ২৩ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ১৭৬ মি.গ্রা
- আয়রন – ৩৩.৫ মি.গ্রা
- ম্যাগনেসিয়াম – ১৯১ মি.গ্রা
- পটাসিয়াম – ৭৭০ মি.গ্রা
মেথির উপকারিতা
মেথির চমৎকার সব স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য প্রাচীন আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞানেও দেখা যাচ্ছে মেথির ব্যবহার। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক মেথির উপকারিতা নিয়ে।
১। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : মেথিতে বিদ্যমান দ্রবনীয় খাদ্য আঁশ রক্ত ও সিরাম এর শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে। একই সাথে ইনসুলিন উৎপাদনকেও ত্বরান্বিত করে। এছাড়া আরও একটি গবেষণায় উঠে এসেছে মেথিতে বিদ্যমান এই খাদ্য আঁশ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের হজম এবং শোষণ প্রক্রিয়া ধীরগতির করে তোলে যা গ্লুকোজ হোমিওস্ট্যাসিস এর জন্য বেশ ভালো।
২। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ : মেথিতে বিদ্যমান দ্রবণীয় খাদ্য আঁশ প্লাজমা কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। এছাড়া মেথি গ্রহণের একটি চমৎকার দিক হচ্ছে এটি খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমালেও ভালো কোলেস্টেরল বা HDL এর মাত্রা বজায় রাখে। ফলে হৃদযন্ত্র সুরক্ষিত থাকে অনেকাংশেই।
৩। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য এর বিপরীতে ভূমিকা রাখে : মেথিতে বিদ্যমান ফাইবার পানি ধরে রাখে এবং মল নরম করে। একই সাথে মলত্যাগ নিয়মিত করে। ফলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য এর সমস্যায় উপকার হয়।
৪। ওজন নিয়ন্ত্রণ : মেথির মতন খাদ্য আঁশ এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার অ্যানোরেক্সিজোনিক এবং ইনসুলিনোট্রপিক হরমোন নি:সরন করে যা গ্লুকোজের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
৫। অ্যান্টিকারসিনোজেনিক ভূমিকা : খাদ্য তালিকায় মেথির উপস্থিতি কোলনকারসিনোজেনেসিস রোধ করে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
৬। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎস : গবেষণায় উঠে এসেছে, মেথিতে উপস্থিত ফেনোলিক এবং ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান সমূহ যা একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসের জন্য উপকারী।
৭। বুকের দুধ বৃদ্ধিতে : স্তন্যদানকারী মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে প্রাচীনকাল থেকেই মেথি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মেথি গ্যালাক্টোগগ হিসেবে কাজ করে যা বুকের দুধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
৮। চুলের যত্নে : মেথি চুল পড়া রোধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্পের ইনফেকশন দূর করে।
মেথির অপকারিতা
অতিরিক্ত ব্যবহারে উপকারী উপাদানও দেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। মেথির ক্ষেত্রেও এই কথাটি প্রযোজ্য। অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে হুট করে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। এছাড়া কিছু ব্যক্তির অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় মেথি গ্রহণ না করাই উত্তম। কেননা এক্ষেত্রে মেথি বাচ্চার জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে৷
মেথি ব্যবহারের নিয়ম
১। ডায়াবেটিসে মেথি খাওয়ার নিয়ম: এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করতে হবে। অথবা ১ চা চামচ মেথির গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়েও পান করা যায়৷
২। গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম: ১ চা চামচ মেথি চিবিয়ে খাওয়া যায়। অথবা পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সেটাও গ্রহণ করা যায়।
৩। চুলের যত্নে মেথির প্যাক : মেথি ভিজিয়ে রেখে ব্লেন্ড করে দই এর সাথে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করা যায়৷ এই হেয়ার প্যাক চুলের গোড়া সহ সম্পূর্ণ চুলে লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল ঝলমলে হয়ে ওঠে। চাইলে মেথি গুঁড়া করে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়েও চুলে ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া মেথি গুঁড়া বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা যায়৷ মেথি বেশ কার্যকরী একটি ভেষজ উপাদান যা যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এটি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় গ্রহণ করাই শ্রেয়।