খাদ্যের গুনাগুণ

রূপচর্চায় খাদ্যদ্রব্যের ব্যবহার

রূপচর্চা

খাবার কি শুধুমাত্রই পেটের ক্ষুধা মিটিয়ে দেহের পুষ্টি যোগায়? অবশ্যই নয়। খাদ্যদ্রব্যের আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে। পুরুষেরা নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন শুনে? কিন্তু নারীদের অবাক হওয়ার কথা নয়। কারণ তারা জানেন যে অনেক খাদ্যদ্রব্য আছে যা খুব সহজেই রূপচর্চা কাজে ব্যবহার করা যায়। প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা সম্পাদিত হয় বিধায় কোন প্রকার পার্শ-প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না! কিন্তু কি কি খাবার ব্যবহার করবেন রূপচর্চার জন্য? জানার জন্য পড়ে নিন এই আর্টিকেলটি!

রূপচর্চা ও খাদ্যদ্রব্য

যে সমস্ত খাদ্য দ্রব্য রূপচর্চা কাজে ব্যবহার করা যায় তাদের নাম এবং ব্যবহারের নিয়ম নিন্মে বর্নিত হলোঃ

গ্রিন টি

গ্রিন টি হল একটি হারবাল পানীয় যা ত্বকের জন্য অনেক ভালো। এটি ত্বকের পোড়া দাগ দূর করে, ত্বক নরম রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ত্বকের গভীর কাল দাগ দূর করে ও ব্লেমিসেস দূর করে। গ্রিন টি ব্যাগ অল্পকিছু সময় ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে সেটা চোখের উপর আলতো করে চেপে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রিন টি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কিছুদিন এভাবে গ্রিন টি ব্যাগ ব্যবহার করে নিমেষেই চোখের ক্লান্তিভাব দূর হয়ে যাবে।

বিভিন্ন ফলের রস বা জ্যুস

রুপচর্চার কাজে বিভিন্ন ফলের জুস এর ব্যবহার নতুন কিছু নয়! বাজারে সহজে পাওয়া যায় এমন ফলের মধ্যে আপেল অন্যতম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এর ভিটামিন বি ত্বকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে রক্ষা করে। পুষ্টিকর খাবার হিসেবেই নয়, রূপচর্চায়ও আপেল দারুণ কার্যকর। প্যাকটি তৈরি করতে প্রথমে একটি আপেল ছোট ছোট করে কেটে ব্লেন্ডারে মিহি করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর আপেলের পেস্টের সঙ্গে ২ টেবিল-চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে চোখের চারপাশ এড়িয়ে পুরো মুখে লাগাতে হবে। প্যাকটি লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে কিছুটা শুকিয়ে গেলে, কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখের চামড়ায় ভাজ পড়া ও পিগমেন্টেশনের সমাধানে আপেল খুব কার্যকরী একটি ফল । শুষ্ক ত্বকের জন্য ১/২ টি আপেল বেটে তাতে ১/২ চামচ লেবুর রস ,সামান্য শসার রস আর একটি অর্গানিক ডিমের কুসুম একত্রে মিশিয়ে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা কমে আর্দ্রতা বজায় থাকবে আর ত্বক মসৃণ কোমল হবে। আপেলের এন্টি এইজিং উপাদান বলিরেখা সমস্যা সমাধানে ভীষণভাবে কাজ করে। খুশকি দূর করতে মাথার ত্বকে কমলালেবুর রস ব্যবহার করুন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কমলালেবুর রসের সাথে গোলাপজল ও মধু মিশিয়ে তুলা দিয়ে নিয়মিত মুখে লাগালে মুখের রুক্ষ ভাব কমে যাবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে ও ত্বকের কোমলতা বাড়বে।

লাল আটা ও যবের ছাতু

চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে জিংক। ত্বকের কোষগুলোর জন্যও জিংক প্রয়োজন। লাল আটা, যবের ছাতু সহ বিভিন্ন শস্যকণায় মিলবে জিংক। চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করবে বায়োটিন। কাঠবাদাম, অর্গানিক ডিমের কুসুম প্রভৃতি থেকে মিলবে প্রয়োজনীয় এই উপাদানটি।

মধু

মধু প্রাকৃতিকভাবে উপকারী একটি উপাদান যা ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে সহায়তা করে। মধুতে থাকা এনজাইম ত্বকের লোমকূপ পরিস্কার করে থাকে। এছাড়া মধুতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা করে কালচে ভাব দূর করে। মধু যেহেতু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সম্পন্ন একটি উপাদান, তাই এই উপাদানটি মুখে ব্যবহারে তা খুব সহজেই ক্ষত চিহ্ন নির্মূলে সহায়তা করে থাকে। মধুতে থাকা নিউট্রিয়েন্টস নিস্তেজ চুলকে উজ্জ্বল করে। এটি চুলে কন্ডিশনারের কাজ করে। তাই এর জন্য দুই টেবিল চামচ মধু নারিকেল তেলের সাথে চুলে মাখতে পারেন। তবে মধু কেনার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে তা প্রাকৃতিক খাঁটি মধু কি না! বাজারে অনেক ভেজাল মধু পাওয়া যায় যা ব্যবফারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে!

নারিকেল ও সরিষার তেল

সৌন্দর্যচর্চায় বিশেষ করে চুলের যত্নে যুগে যুগে সেরা হিসেবে খ্যাত নারকেল তেল। চুলের গোড়া শক্ত করে এই তেল। এ ছাড়া ত্বকে মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের ব্লিচ হিসেবে নারকেল তেল যে ব্যবহৃত হতে পারে তা আমরা অনেকেই জানি না। নারকেল তেল দিয়ে নিয়মিত মাসাজ করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। পিগমেন্টেশনের সমস্যা দূর করে। এছাড়া চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায়। সরিষার তেল গরম করে তালুতে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন। দেখবেন খুশকি একেবারেই সেরে যাবে। সরিষার তেল ত্বকে আর্দ্রতা জোগাতে পারে। শীতে ফাটা ত্বকে এর মালিশ খুব উপকারী। শিশুর ত্বকেও খাঁটি সরিষার তেলের ম্যাসাজ অন্য রাসায়নিকযুক্ত তেলের তুলনায় নিরাপদ। ঠাণ্ডার সময় উষ্ণতাও দেয় এই তেল। ঠাণ্ডা, কফ, মাথাব্যথা কমাতে সরিষার তেলের ম্যাসাজ উপকারী।

লাল চিনি

মরা চামড়া তুলতে ভাল কাজ করে লাল চিনি। এক চা চামচ গরম নারকেল তেলের সঙ্গে দু’চা চামচ লাল চিনি মিশিয়ে মুখে স্ক্রাব করুন। হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মরা চামড়া উঠে গিয়ে ত্বক উজ্জ্বল হবে। সব ধরনের ত্বকেই দারুণ স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে লাল চিনি। অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক টামচ চিনি ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। হালকা গরম পানিতে আলতো করে স্ক্রাব করে তুলে ফেলুন। গর্ভধারণের পর বা হঠাৎ করে ওজন কমে গেল ত্বকে স্ট্রেচ মার্ক দেখা দেয়। চামড়ার ওপর ফাটা ফাটা দাগ দেখতে বিশ্রি লাগে। এই স্ট্রেচ মার্ক তুলতে পারে চিনি। লাল চিনি, আমন্ড তেল ও মধু মিশিয়ে রোজ মালিশ করুন। নিয়মিত করলে ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যাবে স্ট্রেচ মার্ক।

আরও পড়ুন

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা

মাথাব্যথা ও ঘুম না হওয়ার সমস্যা দূর করতে দুধ ও মধুর মিশ্রণ

One thought on “রূপচর্চায় খাদ্যদ্রব্যের ব্যবহার

Leave a Reply